আন্দোলনের জেরে বেড়েছে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি
রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস জুলাই-সেপ্টেম্বরে সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায়ে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। তিন মাসের কোনো মাসেই এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। মূলত দেশজুড়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সাধারণ ছুটির পাশাপাশি বেশ কয়েক দিন কারফিউও ছিল। শুল্ক-কর আদায়ে এসবের প্রভাব পড়েছে। আর আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকার পরিবর্তনের পরও আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যে কারণে কাক্সিক্ষ হারে রাজস্ব আদায় করা যায়নি। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়েও কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে সব মিলিয়ে ৭৪ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকার শুল্ক-কর আদায় হয়েছিল। তার চেয়ে এবার ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের পুরো প্রথম প্রান্তিকেই রাজস্ব আদায়ে মন্দাভাব ছিলো। কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি কর ও শুল্ক কর্মকর্তারা। জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ২৫ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাসেই রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। পরের মাস আগস্টেও একই অবস্থা দেখা গেছে। ওই মাসে ৩১ হাজার ৬০৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। ওই মাসে রাজস্ব আয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়। আর গত সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৯ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ২ কোটি টাকা। ওই মাসেও রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সূত্র জানায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর- এই তিন খাতের কোনোটিতেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তিন খাতেই আগের বছরের চেয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে, অর্থাৎ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওই সময়ে সবচেয়ে আয়কর খাতে বেশি ঘাটতি হয়েছে। তিন মাসে ঘাটতি হয় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। ওই খাতে আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৩৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২৩ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ কোটি টাকা কম। তাছাড়া আমদানি খাতে তিন মাসে ২৮ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার লক্ষ্যের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২২ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ওই খাতে ঘাটতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দেড় হাজার কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে। আর গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে ভ্যাট বা মূসক আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। ভ্যাট আদায় হয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। ওই সময়ে এই খাতের লক্ষ্য ছিল ৩৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের জন্য সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ও কর, অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে বাংলাদেশ এখন ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেজন্য মানতে হচ্ছে বহুজাতিক সংস্থাটির আরোপিত নানা ধরনের শর্ত। ওই শর্ত থেকে রাজস্ব খাতও বাদ যায়নি। ওই খাতে বড় দুটি শর্ত হলো প্রতিবছর জিডিপির দেড় শতাংশ পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে ও ২০২৭ সালের মধ্যে সব ধরনের করছাড় তুলে দিতে হবে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কৌশল ঠিক করতে হবে।