নাগরিক অধিকার

তারুণ্যের সভার উদ্যোগে নানা আয়োজনে মুখরিত কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা

স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীতে তরুণদের সংগঠন ‘তারুণ্যের সভা’র উদ্যোগে নানা আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠেছে ঢাকার কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা। শুক্রবার (৫ জুলাই, ২০২৪) বিকেল ৩টায় ‘তারুণ্যের সভা’র আয়োজনে সেগুনবাগিচাস্থ কচি-কাঁচার মেলায় আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি, পুরষ্কার বিতরণ সহ নানা অনুষ্ঠানের। হাজারো তরুণের উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাসে এসময় ভরে ওঠে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচা ভবন।

‘উগ্রবাদ মোকাবেলায় তরুণদের ভূমিকা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তারুণ্যের সভার সভাপতি আয়েশা ছিদ্দিকার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন, হেযবুত তওহীদের উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মশিউর রহমান, তারুণ্যের সভার উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ,  দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, দেশেরপত্রের সাহিত্য সম্পাদক কবি রিয়াদুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন লেখক ও নাট্যকার ওবায়দুল হক বাদল ও তারুণ্যের সভার সদস্য নওশীন আমিন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে অনুষ্ঠানের সভাপতি আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, সমাজ কিংবা সভ্যতা পরিবর্তনে তরুণরা সব সময় এগিয়ে এসেছে, সামনের কাতারে থেকেছে। একটি জাতিকে তারাই এগিয়ে নিতে পারে সভ্যতার শিখরে। আজকে নানা অপসংস্কৃতি আমাদের তরুণদের গ্রাস করে ফেলছে। তবে আমরা আজকের অনুষ্ঠান থেকে এমন কিছু নিয়ে যাবো যেন আমরা সব ধরনের অপসংস্কৃতি, আপরাজনীতি, ধর্মান্ধতা, গুজব হুজুগ এড়িয়ে একটি নতুন সভ্যতা নির্মাণ করতে পারি, তারুণ্যের ঝংকার তুলতে সাহায্য করবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, তরুণরা জাতির মূল শক্তি। তাই কোনো জাতিকে মেরুদণ্ডহীন ও পদানত করতে তরুণদের উপর প্রথম আঘাত হানা হয়। এই আঘাতের হাতিয়ার হল অপসংস্কৃতি, মাদক, কুশিক্ষা, অপরাজনীতি ইত্যাদি অপশক্তি। ব্রিটিশ যুগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষের উর্বর জমিতে আফিমের চাষ আরম্ভ করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তরুণরা আফিম খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকবে। এতে একদিকে তাদের ব্যবসাও হবে আবার তরুণরা কোম্পানির দুঃশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার তেজও হারাবে।

তিনি আরও বলেন, তারুণ্যকে নিজেদের অনুগত করতে ব্রিটিশরা প্রবর্তন করেছিল ষড়যন্ত্রমূলক দুই ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা। একটি মাদ্রাসা শিক্ষা আরেকটি সাধারণ শিক্ষা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে বের হবে এমন একটি জনগোষ্ঠী যারা আধুনিক পৃথিবীতে অচল, তাদের মধ্যে কোনো জীবনমুখী দক্ষতাই থাকবে না। তারা দেশ জাতি রাষ্ট্র কীভাবে চলে তা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। অন্যদিকে তারা সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সৃষ্টি করল এমন একটি শ্রেণি যাদের কাজ হল উপনিবেশের কেরানিগিরি করা। তাদের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হল নিজেদের জাতি সম্পর্কে অজ্ঞতাপ্রসূত হীনম্মন্যতা ও ইউরোপীয়দের প্রতি অন্ধভক্তি। কোনো আদর্শ, কোনো দেশপ্রেম, ন্যায়নীতিবোধ তাদের হৃদয়ে স্থাপন করা হল না।

হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, ব্রিটিশ শাসন আজ না থাকলেও তাদের শিক্ষা আজও আছে। আমাদের তরুণ সমাজ আজও শিক্ষার দিক থেকে দ্বিধাবিভক্ত। লক্ষ লক্ষ তরুণ মাদ্রাসায় পড়াশুনা করছে। তাদেরকে ধর্মের আত্মা যে মানবতা- তা শেখানো হচ্ছে না। শেখানো হচ্ছে কিছু মাসলা-মাসায়েল। তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের পিকেটার হিসাবে। তারা বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে, নাশকতা সৃষ্টি করছে। একইভাবে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী পড়ছে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তাদেরকে চরম বস্তুবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত করা হচ্ছে। তাদের সামনে জীবনের একটাই লক্ষ্য- যে কোনো পথেই হোক অধিক অর্থ উপার্জন করতে হবে, বাড়ি-গাড়ি করতে হবে। অধিকাংশের কাছে দেশের চেয়ে ইউরোপ আমেরিকাই প্রিয়। শিক্ষাঙ্গনগুলোতে ছাত্র রাজনীতির বলি হচ্ছে তরুণরা। সবার হাতে স্মার্টফোন যার নেশা আফিমের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সেখানে অশ্লীল অপসংস্কৃতির এক অন্ধকার জগৎ। সেখানে জীবনের মূল্যবান সময়কে নিঃশেষ করে ফেলার অগণিত অলিগলি। সে সব গলিতে ঢুকে হারিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল ডিভাইসে আসক্ত আমাদের তারুণ্য।

তারুণ্যের সভার নানা উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, সংগঠনটি তরুণদের নিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠে, তাদের শরীর গঠনের প্রয়োজনীয়তা ছড়িয়ে দিচ্ছে কবিতায় গানে। তাদের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাচ্ছে সাহিত্য পত্রিকার পাতায়। এই তরুণরা বিভিন্ন জীবনদক্ষতার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। বিভিন্ন প্রকার ভাষাগত ও বাচিক দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ইত্যাদির দিকে যেমন তারা জোর দিচ্ছে তেমনি নৈতিক ও মানবিক বৈশিষ্ট্যেও তারা স্থাপন করছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তিনি তারুণ্যের সভার ভাবাদর্শ ও চেতনার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সংগঠনটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। ভবিষ্যতে সংগঠনটি তরুণ সমাজকে সঠিক পথ দেখাবে এবং আগামীর তরুণদের সামনে উজ্জ্বল অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সভায় উপস্থিত তরুণদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, তারুণ্যের সভার গাজীপুর ব্রাঞ্চের শাহাদাত হোসেন, আশুলিয়া ব্রাঞ্চের কো অর্ডিনেটর ও ইডেন কলেজ শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার ইভা, প্রচার সম্পাদক আনিসুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক রাদুল ইসলাম, সদস্য ও ব্রাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী রামিসা, সদস্য ও হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী মেকদাদসহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন তারুণ্যের সভার সদস্য হাফেজ মো. শামিম। পরে কবি ও গীতিকার রিয়াদুল হাসানের লেখা তারুণ্যের সভার থিম সং ‘আমরা তরুণ সেনা’ গানটি পরিবেশন করেন মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিয়মিত শিল্পী শাহীন আলম, তহমিনা আক্তার চাঁদ ও তারুণ্য সভার সদস্য সাইদুল ইসলাম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে তারুণ্যের সভার পথচলা ও কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানজুড়ে “হেযবুত তওহীদ দিচ্ছে ডাক, তারুণ্য মুক্তি পাক; তারুণ্যের অঙ্গীকার, রুখতে হবে অবিচার; তারুণ্যের অগ্রগতি, বাঁচবে সমাজ বাঁচবে জাতি; দিকে দিকে একি শুনি, তারুণ্যের জয়ধ্বনি; তারুণ্যের সংগ্রাম, চলছে চলবে; ধর্মব্যাবসা রুখে দাও; রুখে দাও রুখে দাও, জঙ্গিবাদ রুখে দাও; রুখে দাও রুখে দাও, সন্ত্রাসবাদ রুখে দাও” ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।

অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিগণ আনুষ্ঠানিকভাবে তারুণ্যের সভার বিশেষ স্মারক “ঝংকার” মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে লেখক ও নাট্যকার ওবায়দুল হক বাদলের লেখা বিপ্লবী র‌্যাপ গান ‘ঐক্য ছাড়া গতি নাই, আমরা সবাই ভাই ভাই’ পরিবেশন করেন তারুণ্য সভার সদস্য বিশিষ্ট র‌্যাপার রোহিদ। এছাড়াও তারুণ্যের সভার সদস্য ও মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর শিল্পীরা গান ও কবিতা পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী প্রথম পাঁচজনকে পুরষ্কৃত করা হয়। বিজয়ীরা হলেন, উম্মে সালমা, আমতুন নূর, হামিদ ইবনে হায়াত, নওশীন আমিন ও কেমি আক্তার। রাত ৯টায় সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।