নাগরিক অধিকার

হেযবুত তওহীদ কালো তালিকাভুক্ত নয়: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনবিদের মতামত

ঢাকা, ২৫ এপ্রিল: বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও অনলাইন মাধ্যমে মাঝেমধ্যে ‘জঙ্গি সংগঠন’ ও ‘কালো তালিকাভুক্ত’ আখ্যা দিয়ে হেযবুত তওহীদের নাম প্রকাশিত হয়ে আসছে। তবে এ বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রজ্ঞাপন কখনো জারি হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায় থেকে জানানো হয়, “হেযবুত তওহীদকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে -এমন কোনো রেকর্ড আমাদের কাছে নেই।” বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করে জানা গেছে, হেযবুত তওহীদের কালো তালিকা সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাঁদের কাছেও নেই।

২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল দৈনিক আমারদেশ -এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ সাংবাদিকদের জানান- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিযবুত তাহ্‌রীরসহ ১২টি ইসলামি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ‘জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এবং তাদের কার্যক্রম নজরদারিতে রাখতে পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিক ১৬ বছর আগে দেওয়া এই মৌখিক বক্তব্যের কোনো লিখিত আদেশ বা সরকারি প্রজ্ঞাপন আজও পাওয়া যায়নি, ফলে এর আইনগত ভিত্তি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।”

এরপরও একাধিক জাতীয় দৈনিক, যেমন দৈনিক ইত্তেফাক (০২ নভেম্বর ২০১৯) সহ বিভিন্ন পত্রিকায় হেযবুত তওহীদকে কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব প্রতিবেদন বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও উইকিপিডিয়ায়ও বারবার উদ্ধৃত হচ্ছে, যার ফলে সংগঠনটির সদস্যরা সামাজিক ও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

গণমাধ্যমের এই অহেতুক প্রোপাগান্ডা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারের ফলে হেযবুত তওহীদের হাজারো সদস্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ছেন, অনেকে চাকরি, ব্যবসা ও সামাজিক অবস্থানে চরম বিপাকে পড়ছেন। অনেক মামলার এজাহারে সংগঠনটিকে ‘নিষিদ্ধ’ বা ‘কালো তালিকাভুক্ত’ বলে উল্লেখ করা হলেও তদন্ত শেষে পুলিশ কোনো মামলায়ই হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমের কোনো প্রমাণ পায়নি।

এ পর্যন্ত হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে পাঁচ শতাধিক সন্দেহভিত্তিক মামলা (ধারা-৫৪) দায়ের করা হলেও আজ পর্যন্ত আন্দোলনের একজন সদস্যকেও আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি। বরং প্রতিটি মামলায় সদস্যরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

আইনজীবী ও বিচারপতিরাও বলছেন, ‘কালো তালিকা’ বলার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এক মন্তব্যে বলেন, “আসলে কালো তালিকা বলে কোনো বিষয় নেই, তাই কাউকে এমন তালিকাভুক্ত বলা আইনি দৃষ্টিতে ভিত্তিহীন।”

এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোর্শেদ বলেন, “আইনগতভাবে ‘কালো তালিকা’ বলতে কোনো পরিভাষা নেই এবং হেযবুত তওহীদকে এমন তালিকায় রাখার যৌক্তিকতাও নেই।”

একই বক্তব্য দেন সিনিয়র আইনজীবী গোলাম মহিউদ্দিন দুলাল ও এডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা। হেলালুদ্দিন মোল্লা এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করলে আদালত তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ‘কালো তালিকা’ বলে কোনো কিছু নেই, ফলে রিট আবেদন আমলযোগ্য নয়।

সাইবার পুলিশ সেন্টারের এডিশনাল ডিআইজি জাহিদ হাসান বলেন, “একটি দলকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে, কিন্তু কালো তালিকা করা যায় না।”

বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, বারবার এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার একটি ধর্মীয় সংস্কারমূলক সংগঠনের সদস্যদের মৌলিক অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও আইনি নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বটে।