সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চেষ্টা ষড়যন্ত্র: তারেক রহমান
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, “এর পেছনে অবশ্যই ষড়যন্ত্র আছে।”
সোমবার বিএনপি মিডিয়া সেল আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, “কিছুদিন আগে যেমন সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করা হয়েছিল, ঠিক তেমনই এখন সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এটুকু নিশ্চয়ই বুঝি যে এর পেছনে অবশ্যই ষড়যন্ত্র আছে। আমরা সবাই মিলে যদি সচেতন থাকি, অবশ্যই এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।”
সরকার পতনের সাত মাস পর সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধান নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির শীর্ষ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে।
গত শুক্রবার রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি দাবি করেন, গত ১১ মার্চ সেনানিবাসে এক বৈঠকে ‘পরিশুদ্ধ’ রূপে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ‘না’ বললে চাপ প্রয়োগ করা হয়।
এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পরদিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর সতর্ক অবস্থান দেখা যায়। রাজধানীর উত্তরায় সেনা সদস্যদের ঘিরে একটি জমায়েতে ‘ওয়াকার না হাসনাত, হাসনাত, হাসনাত’ বলে স্লোগানও দেওয়া হয়।
এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম পাল্টা স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তিনিও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের ওপর কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।
সেনা সদর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করা না হলেও সুইডেনভিত্তিক অনলাইন সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজ সেনা সদরের বরাত দিয়ে হাসনাতের বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার’ বলে উল্লেখ করেছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, তাদের দলের দুই নেতার এই বৈঠকের বিষয়ে তারা আগে কিছু জানতেন না।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার রাতে ব্যাপক গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। তবে স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, “এসব গসিপ, আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, দুই-একজন বলছে।”
তারেক রহমান বলেন, “আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি, একটি মহল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমরা সবাই যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে অবশ্যই এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে পারব।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা একে একে প্রত্যাহার হয়েছে এবং তার সব সাজা বাতিল হয়েছে। তবে তিনি ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে ভার্চুয়ালি দলকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, “সত্য ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। দেশের জনগণ যেন সঠিক তথ্য জানতে পারে, সে দায়িত্ব সাংবাদিকদের নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারকে বিদায় করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন উৎসর্গ করে যে স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়।”