লেবাননে আতঙ্কে দিন কাটছে বাংলাদেশি প্রবাসীদের
‘দিনে কাজ করি, রাতে ঘুমাতে যাই। তখনই শুরু হয় বোমাবর্ষণ। চারপাশ যেন জাহান্নামে পরিণত হয়। পুরো এলাকাজুড়ে শুরু হয় কান্নার রোল, আর বিকট আওয়াজে বোমা ফাটার শব্দ পাই। হামলা শুরুর পর থেকে দুশ্চিন্তা আর বোমার শব্দে ঘুম নেই।’—এমন কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সাহিদ হোসেন, যিনি লেবাননের বৈরুত শহরের হামড়া এলাকায় বসবাস করেন।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার টনকি ইউনিয়নের ভাইড়া গ্রামের মোহাম্মদ ফজলুর রহমানের ছেলে সাহিদ, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জীবিকার তাগিদে লেবাননে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলের হামলার পর থেকে তার মতো হাজারো বাংলাদেশি প্রবাসী নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। তাদের অনেকে দেশে ফিরতে চান, আবার অনেকেই ঋণ করে আসার কারণে লেবাননে থেকে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
বৈরুতের পাশের শহর সেমুনের বাসিন্দা মো. ফরহাদ জানান, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে দুশ্চিন্তায় তার ও তার সঙ্গী বাংলাদেশিদের দিন কাটছে। বৈরুতের সেমুন, তারাবুলস, জুনি, আলাইসহ কয়েকটি এলাকায় এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনও হামলা না হলেও আশপাশের শহরগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। এসব এলাকার বাংলাদেশিরা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন এবং তাদের অনেকে কাজ হারিয়েছেন।
তবে অনেকের প্রত্যাশা, এই সংকট দ্রুত কেটে যাবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী সংকট হলে নিরাপদে দেশে ফেরানোর দাবি জানিয়েছেন মো. ফরহাদ।
পূর্ব লেবাননের জাহলে জেলার আসতুরা এলাকায় দীর্ঘ এক যুগ ধরে বাস করছেন বাংলাদেশের নিজাম উদ্দিন। তার এলাকার আশপাশে হামলার ঘটনা ঘটলেও আসতুরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। তবে এক ঘণ্টার দূরত্বের এলাকায় হামলা হচ্ছে। নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘দিনে আকাশে কালো ধোঁয়া দেখলে বুঝি হামলা শুরু হয়েছে। তবে এখনও আমি নিরাপদে আছি, সবার কাছে দোয়া চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী জানান, সাধারণ নাগরিকদের এলাকাগুলোতে কম হামলা হচ্ছে, তবে হিজবুল্লাহ-অধ্যুষিত এলাকায় হামলা বাড়ছে। এ কারণে অনেক বাংলাদেশি বুঝেশুনে অবস্থান পরিবর্তন করছেন। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
‘লেবাননপ্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর সভাপতি আব্দুল করিম বলেন, ‘দুই যুগের বেশি সময় ধরে লেবাননে আছি, এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি আগে দেখিনি। আকাশ দিয়ে ড্রোন ও বিমান উড়ে যায়, আর ভয়ে দিন কাটে। কয়েক দিন আগে বাসার কাছেই হামলা হয়, এরপর থেকে আতঙ্কে আছি।’ তিনি আরও জানান, দূতাবাস থেকে দেশে ফেরার ইচ্ছুকদের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে যারা ঋণ করে লেবাননে এসেছেন, তাদের অবস্থা খারাপ, কারণ তারা কাজ পাচ্ছেন না এবং দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর থেকেই লেবানন সীমান্তেও ইসরায়েল হামলা চালিয়ে আসছে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিমান হামলা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে স্থল হামলার কারণে লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের হাজারো মানুষ।