লাখ লাখ টাকা ঋণের প্রলোভনে শাহবাগে এত লোক কীভাবে এলো?
ঢাকার শাহবাগে এক লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার প্রলোভনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস ভর্তি করে লোক আনার অভিযোগে পুলিশ তিন শতাধিক বাস ও মাইক্রোবাস আটক করেছে। সোমবার এ ঘটনায় ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীনসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শাহবাগ থানা পুলিশ।
প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে আসা মানুষ:
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চর থেকে আসা গার্মেন্টস কর্মী জাকির হোসেন ভুইয়া জানান, একটি চক্র তার মায়ের মাধ্যমে তার রেজিস্ট্রেশন করিয়েছিল এবং ৫০০ টাকা নিয়েছিল। তার মাকে বলা হয়েছিল, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে গরিবদের ঋণ দেওয়া হবে। শাহবাগে আসলে ঋণ পাওয়া যাবে, এমন আশায় তিনি কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিলেন।
অন্যদিকে, মানিকগঞ্জ থেকে আসা একদল মানুষ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাদেরও ঋণের আশ্বাস দিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছিল। এসব প্রলোভনের কথা জেনে অনেকেই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’-এর ভূমিকা:
আটকদের কাছ থেকে সংগঠনের হ্যান্ডবিল ও ঋণের ফরম উদ্ধার করেছে পুলিশ। এতে আ ব ম মোস্তফা আমীনের নাম উল্লেখ করে বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ফরমগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের নাম, ফোন নম্বর ও স্বাক্ষর ছিল।
শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর জানান, মোস্তফা আমীন ও তার সহযোগীদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও চলছে। এ ঘটনায় আরও যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
গোয়েন্দা নজরদারিতে ঘাটতির অভিযোগ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ জানান, রোববার রাত থেকেই শাহবাগ এলাকায় বাস ও মাইক্রোবাস ভর্তি মানুষ আসতে শুরু করে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশের নজরে আসার পর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে এত বড় একটি পরিকল্পনা গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে কীভাবে বাস্তবায়িত হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। তবে এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
গ্রামীণ অঞ্চলে সংগঠনের কার্যক্রম:
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ সংগঠনটি প্রায় এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছিল। কিশোরগঞ্জের ফরিদপুর গ্রামের মিনারা বেগম জানান, তার কাছ থেকেও রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছিল।
মানিকগঞ্জের বাসিন্দা দবির উদ্দিন এবং তার স্ত্রীকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তারা স্থানীয়ভাবে প্রলোভনের মাধ্যমে মানুষকে সংগঠিত করছিল।
ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ও পরবর্তী পদক্ষেপ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং পুলিশ উভয়েই ঘটনাটিকে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে এ ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী কারা, তা জানতে তদন্ত চলছে। প্রশাসন জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য এবং সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া হবে। -বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অনুসারে।