নাগরিক অধিকার

রাজধানীতে বেড়েছে ছিনতাই আতঙ্ক: নাগরিক জীবনে নিরাপত্তা শঙ্কা

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে পুলিশের কার্যক্রমে স্থবিরতা আসে। থানা থেকে পুলিশের অনুপস্থিতি অপরাধ দমনে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নতুন সরকার ঢাকার পুলিশ বিভাগে ব্যাপক পরিবর্তন আনে। আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনারের পদে রদবদল করা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এখনও সন্তোষজনক নয়। এর ফলে দিনে-দুপুরে রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর থেকে রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পেশাদার ছিনতাইকারীরা সর্বস্ব লুট করতে আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। গত পাঁচ মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। একই সময়ে পুলিশ ছিনতাইয়ের অভিযোগে ৮৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁও, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যার পর ছিনতাই বেড়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হলেও তা কার্যকর হয়নি।

১৮ নভেম্বর রাতে রবিউল মিল্টন আদাবর এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এসময় চাপাতি দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়।

একই রাতে যাত্রাবাড়ীতে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন হাফেজ কামরুল হাসান। ফ্লাইওভারের ওপর তার বুকে ছুরি মেরে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়।

পুলিশি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১২৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৭ জন।

২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ছিনতাইয়ের মামলা সংখ্যা নিম্নরূপ: ২০১৯: ৮৯৬টি, ২০২০: ৯৭৮টি, ২০২১: ৯৭১টি
২০২২: ১১২৮টি, ২০২৩: ১২২৭টি, ২০২৪: ৮৫৯টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক জানান, ছিনতাই প্রবণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কার্যক্রম পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, “অপরাধীরা চুরি ও ছিনতাইকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। তাদের দ্রুত জামিন ও শাস্তির অভাব অপরাধ বাড়ার কারণ।”

ডিএমপি ও র‍্যাবের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল কার্যক্রম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিট পুলিশিং কার্যক্রম সচল করতে প্রচেষ্টা চলছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নাগরিকরা এখন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন।