নাগরিক অধিকার

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অনেকে অবস্থান করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউবা বাড়িঘর ছেড়ে উঠেছেন আত্মীয় স্বজনদের কাছে। এদিকে ভয়াবহ বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নে পানিতে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।

স্থানীয়রা জানান, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেকোনা গ্রামে তিনটি শিশু বন্যার পানিতে কলার ভেলা নিয়ে খেলছিল। এসময় তারা ভেলা থেকে পানিতে পড়ে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতরা হলো-পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের মো. জমির মিয়ার ছেলে হৃদয় (১৫) ও মো. পছন মিয়ার ছেলে ছাইম (১০)।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী জানান, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল জানান, মনু নদীর পানি মনু রেল ব্রিজ পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার এবং ধলাই নদীর পানি কমলগঞ্জ পয়েন্টে ১৪২ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার নিচে অবস্থান করছে। তবে মনু নদীর পানি মৌলভীবাজার শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার এবং জুড়ী নদীর পানি জুড়ীতে ২০৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সরেজমিন দেখা যায়, মৌলভীবাজার-শমসেরগর রোডের মাতারকাপন বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল থেকে শিমুলতলা বাজার পর্যন্ত এবং শ্যামেরকোনা বাজার থেকে বড়চেগ পর্যন্ত পাঁকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় মাতারকাপন গ্রামের আলমগীর হোসেন, সফদর আলী ও ব্যবসায়ী সজল দাসসহ এলাকাবাসী জানান, বুধবার কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের বড়চেগ এলাকায় ধলাই নদীর বাঁধে অন্তত ৩০ মিটার লম্বা ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই পানিতে রাস্তাটি তলিয়ে গেছে। ফলে সড়ক দিয়ে কিছু থ্রি হুইলারসহ ছোট যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তবে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে । পানিতে তলিয়ে গেছে রহিমপুর ইউনিয়নের ছয়কুট, প্রতাবী ও বড়চেগসহ ৭-৮টি গ্রাম।

রহিমপুর ইউনিয়নের আতুরের ঘর এলাকায় দেখা হয় রসেন্দ্র কর (৩০) ও সীমা কর দম্পত্তির সঙ্গে। ৮ ও ১০ বছরের দুই ছেলে মেয়ে আর হাঁসমুরগী নিয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

রসেন্দ্র কর জানান, বাড়িঘরে পানি উঠায় তিনি পরিবার ও হাঁস- মুরগী নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাচ্ছেন।

কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালিক জানান, তার ইউনিয়নের সন্দ্রাবাজ, মিয়াপাড়া এবং হাজীপুর এলাকার বাঁধের অবস্থা এখন অনেক খারাপ। তারা বালির বস্তা দিয়ে কোনো রকম টিকিয়ে রেখেছেন।

পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, তাদের এলাকায় রাজাপুর গ্রামের পাশে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অর্ধেক ভেঙে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধের অন্তত ২৫টি পয়েন্টে ঝুঁকির মুখে থাকলেও আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছি।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, মৌলভীবাজার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আমরা গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছি। এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য ৪২২ ম্যাট্রিক টন চাল এবং নগদ ২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ১২০০ প্যাকেট রান্না করা খাবার ৪৬৫ প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৬৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।