বালু লুটেরাদের অপতৎপরতায় হুমকির মুখে জাফলংয়ের পরিবেশ
সারা দেশে সিলেটের জাফলং জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হলেও বর্তমানে পাথর ও বালু লুটেরাদের অপতৎপরতায় এই স্থানের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সিলেট শহর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরে, ভারতের মেঘালয় সীমান্তসংলগ্ন খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ডাউকি নদী। এই নদী থেকে ভেসে আসা পাথর স্থানীয়দের অন্যতম আয়ের উৎস।
গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন প্রতি মাসে জাফলংয়ে পাথর মজুদের হিসাব সংরক্ষণ করে থাকে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত ২৬ জুলাই সেখানে প্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ ঘনফুট পাথর মজুদ ছিল।
গত ৫ আগস্ট রাতে জাফলংয়ের সিসি ক্যামেরা বিকল করে একদল দুষ্কৃতকারী বিশাল পরিমাণ পাথর লুট করে। কয়েক সপ্তাহে জাফলং জিরো পয়েন্টের পিয়াইন ও গোয়াইন নদীসংলগ্ন এলাকা থেকে আনুমানিক এক কোটি ঘনফুট পাথর চুরি হয়। এসব পাথরের বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পাথর লুটের পর বর্তমানে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে, যা নদী অববাহিকার পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।অগাস্টে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর একটি চক্র প্রথমে জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশে পাথর লুট শুরু করে। স্থানীয় প্রশাসনের মদদে তারা এখন অবাধে বালু উত্তোলন চালাচ্ছে।
গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি, তবে এটি বন্ধ করতে আমাদের বিপুল লোকবল প্রয়োজন, যা সহজলভ্য নয়। কম লোক নিয়ে অভিযান চালালে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।”
উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশের পক্ষ থেকে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ইতিমধ্যে ১১টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরাণ এবং গোয়াইনঘাটের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপনসহ অনেকে আসামি। অভিযোগ ওঠার পর শাহপরাণকে স্থগিত ও স্বপনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
বেলার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সাহেদা আখতার বলেন, “জাফলংয়ে এখন প্রশাসনের সামনেই বালু-পাথর ব্যবসা চলছে। সম্প্রতি সিলেটের কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে আদালতের রায়ের বিপক্ষে মানববন্ধন ও প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হচ্ছে।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, “সিলেটে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে।”
২০১৫ সালে জাফলংকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০২০ সালে আদালতের নির্দেশে জাফলংসহ সিলেটের আটটি কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়।
গোয়াইনঘাট থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, “জাফলংয়ে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে এখন পর্যন্ত ১১টি মামলা হয়েছে। অভিযান চলমান রয়েছে।” জাফলংয়ের পরিবেশ রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। -বিডিনিউজ।