ফিলিস্তিনিরা বাঁচার অধিকারই হারাচ্ছে : জাতিসংঘ
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য নারী ও শিশু। এই ভয়াবহ মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলের চলমান হামলা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি ফিলিস্তিনিদের জাতিগত অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানান, ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় ২২৪টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে অন্তত ৩৬টি হামলায় নিহত হয়েছেন কেবল নারী ও শিশু।
তিনি বলেন, “গাজায় মানুষ শুধু প্রাণ হারাচ্ছেন না, তারা মাথা গোঁজার ঠাঁই, খাবার, পানি—সবকিছুর জন্য হাহাকার করছেন। এমনকি যেসব এলাকাকে নিরাপদ আশ্রয় বলা হচ্ছে, সেগুলোও হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
শামদাসানি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ৬ এপ্রিল দেইর আল-বালাহ শহরের একটি আবাসিক ভবনে হামলায় এক শিশু, চার নারী ও চার বছর বয়সী এক ছেলে নিহত হন। আর ১১ এপ্রিল ভোরে খান ইউনুসে এক পরিবারের ১০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ৭ জনই শিশু।
ইসরায়েল গাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিলেও, সেই এলাকাগুলোও হামলার বাইরে থাকছে না। যেমন, আল-মাওয়াসি এলাকায় ১৮ মার্চের পর থেকে শরণার্থী তাবুতে অন্তত ২৩ বার হামলা হয়েছে। ৩১ মার্চ রাফাহ শহরের বাসিন্দাদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরেই সেখানে শুরু হয় স্থল অভিযান, যা এখনো চলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন ও রক্তের ব্যাগের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কার্যত বন্ধ হওয়ার পথে চিকিৎসা সেবা।
অন্যদিকে, গাজা সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহও বন্ধ হয়ে গেছে। শহরটির মুখপাত্র হুসনি মহানা বলেন, “আমরা এখন পানির ভয়াবহ সংকটে আছি। পরিস্থিতি দ্রুত না বদলালে সামনের দিনগুলো আরও কঠিন হয়ে উঠবে।”
নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮৮৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের দাবি, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজারো মানুষ চাপা পড়ে আছেন, যাদের জীবিত পাওয়ার আশা ক্ষীণ।
এ নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি। এই যুদ্ধ, প্রতিদিনের মৃত্যু আর চোখের জলের মাঝে গাজার মানুষের জীবনে এখন একটাই প্রশ্ন—আমরা কোথায় নিরাপদ?