পাবনায় হেযবুত তওহীদ সদস্যের উপর হামলার ঘটনায় মামলা
পাবনা সংবাদদাতা:
পাবনায় হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাতে হেযবুত তওহীদের সদস্য মো. মনিরুল মণ্ডল বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মনিরুল মণ্ডল পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর গ্রামের মো. কুদ্দুস মণ্ডলের ছেলে এবং হেযবুত তওহীদের সদস্য।
মামলার আসামিরা হলেন- চরঘোষপুর গ্রামের মৃত আইজ্জালের ছেলে মো. মুন্না প্রাং (৩২), চক ছাতিয়ানি গ্রামের আকুব্বরের ছেলে মো. হাফিজুল (৩০), আলম প্রাংয়ের ছেলে মো. বিপুল প্রাং (৩২), চরঘোষপুর কাবলীপাড়ার হারেজ শেখের ছেলে মো. আলাল শেখ (৪৫), বাদশা শেখের ছেলে মো. হোসাইন শেখ (৩০), আলম শেখের ছেলে আলামিন শেখ (২৩), কিসমত প্রতাপপুর বাজিতপুরঘাট গ্রামের মতিন শেখের ছেলে আ. মোমিন শুভ (২৮), রজব আলীর ছেলে মো. নাসিম (৩৫)সহ অজ্ঞাত আরও ২৫-৩০ জন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, “রবিবার (১৯ জানুয়ারি ২০২৫) রাত সাড়ে ৮টার দিকে মনিরুল মণ্ডলের ভাতিজা ফিরোজ মণ্ডল (২৫), রূপক মালিথা (২৪), মো. সুলতান শেখ (৩২), মো. হাসান শেখ নয়ন (২৮) এবং মো. মিরাজুল (৩২) চরঘোষপুর নফসারের ভাটার মোড়স্থ তার দোকানে বসা ছিলেন। এসময় নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চলাকালীন সময়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামি হাফিজুল ও আ. মোমিন শুভর নেতৃত্বে উল্লিখিত আসামিসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল হাসুয়া, চাইনিজ কুড়াল, চাপাতি, জিআই পাইপ, লোহার রড, লোহার হাতুড়ি, কাঠের বাটাম ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দোকানে প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং দোকান ভাঙচুর করতে থাকে।
এসময় তার ভাতিজা ফিরোজ মণ্ডল, রূপক মালিথা, সুলতান শেখ, হাসান শেখ নয়ন ও মিরাজুল আসামিদের গালিগালাজ ও ভাঙচুর করতে নিষেধ করলে হাফিজুল “হেযবুত তওহীদ করা মিটাইয়ে দে” হামলার নির্দেশ দিলে মুন্না প্রাং চাপাতি দিয়ে ফিরোজ মণ্ডলের মাথায় কোপ দেয়। এ সময় ফিরোজের মাথার সম্মুখে ডান পাশে লাগিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম হয়। আসামি হাফিজুলের হাতে থাকা জিআই পাইপ দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ফিরোজ মণ্ডলের মাথায় বারবার আঘাত করতে থাকে। এতে তার নাকে ও ঠোঁটে লাগিয়ে নাক ও ঠোঁট ফেটে এবং সামনের দুটি দাঁত ভেঙে গুরুতর আহত হন।
বিপুল প্রাংয়ের হাতে থাকা ধারালো চাইনিজ কুড়াল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সুলতান শেখের পেছন থেকে মাথায় কোপ মারলে সুলতান শেখের মাথার পেছনে বাম পাশে আঘাত লেগে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। আসামি আলাল শেখ, হোসাইন শেখ, আলামিন শেখসহ অন্য আসামিরা গালিগালাজ, দোকান ভাঙচুর করে এবং সেখানে থাকা অন্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে এলাপাতাড়ি কোপাতে থাকে ও মারধর করে। এতে আহতরা পিঠে, মাথায়, হাত-পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে আহত হন।
আসামিরা মনিরুল মণ্ডলের দোকানের ফ্রিজ, টিভি, মালামাল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে অনুমান দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে এবং তিনটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে ও ব্যাটারি চুরি করে নিয়ে যায়, যার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এসময় আহতদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় জিয়া মণ্ডল, আলাউদ্দিন, হাবিবুরসহ অনেকে এগিয়ে আসলে আসামিরা হত্যার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।”
মামলার বাদী মনিরুল মণ্ডল জানান, স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহতদের পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ফিরোজ মণ্ডল, রূপক মালিথা, সুলতান শেখ, হাসান শেখ ও মিরাজুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। আসামিদের হামলায় নিরপরাধ ১৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মামলার বাদী মনিরুল মণ্ডল সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। না হলে সন্ত্রাসীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চরঘোষপুর কার্যালয়ে এই উগ্রবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল। সেদিন রাতে প্রায় ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে হেযবুত তওহীদের সদস্য সুজন মণ্ডলকে হত্যা করে। আহত করে আরো ১০ সদস্যকে। আলাল শেখ, আলামিন শেখসহ অনেকেই সেই মামলায় আসামি। মামলা চলাকালীন জামিনে বের হয়ে বাদীকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হামলার হুমকি দেয়। এরই এক পর্যায়ে গত রবিবার পুনরায় সন্ত্রাসী হামলা চালায় তারা।
এদিকে হামলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার হেযবুত তওহীদের সদস্যরা রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। এছাড়াও পাবনার ক্যাফে পাবনা হলরুমে সংবাদ সম্মেলন ও জেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। এসময় ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন হেযবুত তওহীদের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান হেযবুত তওহীদের নেতৃবৃন্দ। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা না হলে হেযবুত তওহীদ রাজপথে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা।