নাগরিক অধিকার

নকলে সয়লাব প্রসাধনীর বাজার, ৭০ শতাংশই মান নিয়ন্ত্রণের বাইরে

দেশে সৌন্দর্য সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রসাধনীর চাহিদা বেড়েছে। তবে এই চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে নকল, মানহীন ও অনুমোদনহীন প্রসাধনী সামগ্রী প্রবেশ করছে। রাজধানী ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে নকল কসমেটিকসের কারখানা গোপনে চালু রয়েছে, যেখানে উৎপাদিত এসব পণ্য সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুরান ঢাকার চকবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেটে নামি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী প্রকাশ্যে বিক্রি হয়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এসব মার্কেটে অভিযান চালালেও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। ভোক্তা অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক ডিজি জানান, দেশে এমন কোনো কসমেটিকস নেই যা নকল হয় না। এদিকে বিদেশ থেকে চোরাই পথে মানহীন কসমেটিকসও দেশে প্রবেশ করছে। এসব পণ্যে আমদানিকারকের তথ্য বা বিএসটিআই লোগো থাকে না, যা ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করে।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, দেশে ব্যবহৃত কসমেটিকস পণ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ নকল বা মানহীন। এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের গবেষণায় জানা গেছে, দেশের কসমেটিকস বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার।

অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স বাংলাদেশ থেকে একজন শীর্ষ নেতা জানান, বৈধপথে পণ্য আমদানি ও দেশীয় উৎপাদন বাদে প্রায় পুরো বাজারই কালোবাজারিদের দখলে। সরকারের রাজস্ব আয় খুবই সীমিত, যা বাড়ানোর জন্য কড়া নজরদারি প্রয়োজন।

বিএসটিআই-এর উপ-পরিচালক মোরশেদা বেগম জানান, পণ্যের মান নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। তবে দেশে এখনও প্রায় ৭০ শতাংশ প্রসাধনী মান নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিএসটিআইয়ের পরিচালক জানান, বিদেশ থেকে বৈধপথে আসা পণ্য বিএসটিআই পরীক্ষার মধ্যেই থাকে, কিন্তু অবৈধ পথে আসা পণ্য নিয়ন্ত্রণে কষ্টকর।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ শিকদার জানান, নকল ও নিম্নমানের প্রসাধনী ব্যবহারে ত্বকের সমস্যা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকল ও মানহীন পণ্য আমদানি এবং বিক্রির কারণে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এবং সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে। এজন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা প্রয়োজন।