নাগরিক অধিকার

ঠাকুরগাঁওয়ে আকাশের পানি নেই পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত কৃষক

ঠাকুরগাঁওয়ে সোনালী আঁশ পাট চাষে কৃষকের সুদিন ফিরছে। পাটের দাম ভালো পাওয়া পাট চাষে আগ্রহী কৃষক। চলতি পাট মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক।

ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, পাট কাটার মৌসুম শুরুতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পুকুর, ডোবা,নালায় পানি ছিলোনা। এতে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে ছিলো কৃষক। অনেকে গরু গাড়ি, নছিমন,ভ্যানে করে মাঠ থেকে পাট এনে বিভিন্ন খাল,ডোবক রাস্তার ধারে এতে কৃষকের বাড়তি খরচ বেশি হয়েছে । গত কয়েক দিন বৃষ্টি নদীর পানি বৃদ্ধি না হওয়ায় অনেক গ্রামে দেখা গেছে নারী-পুরুষ শিশু সহ পাট কেটে নদী, নালা, খাল, বিল ও ডোবায় জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছে এবং নতুন পাট হাটে বাজারে তা বিক্রি করা সহ সব মিলিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন। যা গত বছরে ছিল ৭২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬১ হাজার ১৫ মেট্রিক টন।

তবে পাট আবাদের শুরুতে বৃষ্টি পানিতে নিচু জমির কিছু পাট তলিয়ে নষ্ট হয়। পাট কাটার মৌসুম শুরুতে অনাবৃষ্টি আর টানা খরার কারণে পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানি সংকটে পরেছিলো কৃষক। এখন বৃষ্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ডোবা নালায় পাট জাগ দিতে পারছে তারা। তবে হাট বাজারে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি রয়েছে।
৬ আগষ্ট রবিবার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষক আ. রাজ্জাক শেখ বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে প্রায় ৮থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। পাট উৎপাদন হয় প্রায় ৮-১০ মন। যার বাজারদর প্রায় ২২-২৪ হাজার টাকা। এছাড়া বিঘা প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকার পাটকাঠি পাওয়া যায়।

ভেলাজান ইউনিয়ন পুকুর ডোবার মধ্যে পাটের আশঁ ছাড়ানো কৃষক মো. মোতালেব শেখ বলেন, বৃষ্টি না হওয়ার কারনে প্রথমে খালে পানি কম ছিলো। এখন বৃষ্টি হওয়ায় পানি বৃদ্ধি হওয়াতে খালের মধ্যে পানি এসেছে তাই পাট জাগ দেওয়া, আশঁ ছাড়ানো, রোধে শুখানো, এবং হাটে নিয়ে বিক্রি করা নিয়ে ব্যাস্ত সময়ভেলাজান এলাকার যাচ্ছে। পাট ছাড়ানো শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় গ্রামের মহিলার পাটকাঠি নেওয়ার বিনিময়ে পাটের আশঁ ছাড়ানো কাজ করছে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, পাট চাষের জন্য ঠাকুরগাঁও একটি আদর্শ জেলা। এ বছর জেলায় পাটের আবাদ বেড়েছে। উৎপাদনও ভাল হয়েছে। তবে কিছু উচু এলাকায় পানি কমে যাওয়ায় পাট চাষিরা কিছুটা সমস্যায় পরছেন। আশা করি বৃষ্টি হলে চাষিদের পাট পঁচানোর কাজটি সহজ হলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়াও কৃষকেরা তাদের বাড়ির আশপাশের ছোট ডোবা, খাল-বিলে বৃষ্টি বা অন্যান্য উপায়ে পানি সংরক্ষণ করে পাট জাগ দিলে উপকৃত হবে। এ বছরও চাষীরা পাটের ভাল দাম পাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।