জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি?
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এনসিপি নেতাদের দাবি, former প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না নেয়া অবধি নির্বাচন হতে পারে না। তারা আরও বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ ও গণপরিষদ নির্বাচন একসাথে আয়োজন করা যেতে পারে।
এর আগে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূস এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের মার্চে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, “সরকার প্রধান যেখানে একটি টাইম ফ্রেম ঘোষণা করেছেন, ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির শুরুতে, আমরা ডিসেম্বর ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তবে, নির্বাচন ঘিরে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত মাস হল ‘ডিসেম্বর’। এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বা কোনো ফৌজদারি মামলার বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ফলে, ডিসেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিচার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি শেখ হাসিনার বিচার হওয়ার আগেই নির্বাচন নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আপত্তি রয়েছে?
ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে এনসিপির অবস্থান
এখন পর্যন্ত সরকারি নির্বাচনী প্রস্তুতি ডিসেম্বর মাসকেই ঘিরে রাখা হয়েছে। ফলে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নিয়ে গঠিত এই নতুন রাজনৈতিক দলটির নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য কিছুটা সংশয় তৈরি করছে।
এনসিপির নেতারা বলেছেন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত পূরণ করা প্রয়োজন, এবং তবেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে। তারা মনে করেন, বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, “যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বরে বা মার্চে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে শর্তগুলো পূর্ণ হলে আমরা দ্বিমত জানাবো না। তবে, শুধু নির্বাচন হলেই হবে না, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, সেটি পূরণ করতে হবে।”
বিচার ছাড়া নির্বাচন?
সারজিস আলম আরও বলেছেন, “এই কথাগুলো বলতে চাই যে, যতদিন না শেখ হাসিনার বিচার হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত কেউ যেন ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে। শেখ হাসিনার বিচার করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
তিনি উল্লেখ করেছেন, শেখ হাসিনার বিচার নির্বাচনের আগে নিশ্চিত করা হলে তা নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হবে এবং তা দেশের জনগণের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন।
ডিসেম্বরে সংস্কার সম্ভব?
এনসিপি নেতারা মনে করেন, ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত সংস্কার প্রয়োজন, তা সম্ভব হলে তবেই নির্বাচন হবে। তবে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সহযোগিতা দেখায়, তবে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
এনসিপির নেতা সারজিস আলম বলেছেন, “যদি সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন হয়, তবে আমরা নির্বাচন নিয়ে কোনো দ্বিমত জানাবো না এবং আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত থাকব।”
এনসিপির অবস্থান অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং শর্ত পূরণ হলে তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে।