নাগরিক অধিকার

গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে গাইবান্ধার সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে বন্যার কবলে পড়েছে জেলার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার পরিবার। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে আউশ ধান, পাট, ভুট্টা ও আমন বীজতলা। তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার (৬ জুলাই) সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া, ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, জেলার করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেলেও বিপৎসীমার ১৪২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার চার উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে ইতোমধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। সরকারি হিসেবে চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের সাতটি, সাঘাটার আটটি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৪ ইউনিয়নে পানিবন্দি ১৭ হাজার ৮২০টি পরিবার। এরমধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় দুই হাজার ১৫০টি, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় চার হাজার ৭০০টি, সাঘাটা উপজেলায় পাঁচ হাজার ১৭০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ছয় হাজার ৮০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে মোট ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮টি, ফুলছড়িতে ২৩টি, সদরে ২৪টি, সাদুল্লাপুরে ৩৩টি, পলাশবাড়ীতে ছয়টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে, বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভেতরে বন্যার পানি ওঠায় ইতোমধ্যে সদর উপজেলার ১৭টি, ফুলছড়িতে ১৪টি, সাঘাটায় ২১টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১১টিসহ জেলার মোট ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। এছাড়া, সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগ।

পানিবন্দি এসব এলাকার মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি, কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ও ফজলুপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। এসব এলাকার চারদিকেই পানি থইথই করছে। নিম্নাঞ্চলের সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে পড়েছে। শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে তারা ধীরে ধীরে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। পানিবন্দি মানুষদের নৌকাযোগে চলাচল করতে দেখা গেছে।

এছাড়া, গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দি এসব পরিবারগুলো। এসব এলাকার পাট ও আউশ ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙনে পাট, ভুট্টা, বাদাম ও আউশক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ফজলুপুর ইউনিয়নের বাছের মিয়া বলেন, গত কয়েকদিন থেকে নদীর পানি বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনেক কষ্টের মধ্যে আছি। জমির আবাদও পানির নিচে। এ বছর যে কীভাবে চলবো বুঝতে পারছি না।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান বলেন, বর্তমানে এই ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বন্যায় পানিবন্দি মানুষের এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার প্রয়োজন হয়নি। শুধু গজারিয়ায় নয়, পানিবন্দি সব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট হয়েছে।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলমান বন্যায় ইতোমধ্যে চার উপজেলায় দুই হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যদি দ্রুত পানি নেমে যায়, তাহলে এসবের ক্ষতি কম হবে। আর যদি বন্যা স্থায়ী হয়, কিংবা আরও বাড়ে… তাহলে কী পরিমাণ ফসল নষ্ট হবে, তা পরে জানা যাবে।

গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, উজানের ঢলে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।