গণহত্যা: হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানার খবর বিশ্ব মিডিয়ায়
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বৃহস্পতিবার এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চলা হত্যাকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সকালে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। এখনো তিনি দেশটিতেই রয়েছেন বলেই জানা যাচ্ছে।
গণহত্যার অপরাধে হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবর এসেছে রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়চে ভেলে, ডন, চ্যানেল নিউজ এশিয়াসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স শিরোনামে লিখেছে, নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিক্ষোভ চলাকালীন গণহত্যায় জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এতে আরও বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে সাত শতাধিক মানুষ নিহত হন। এ ছাড়া বহু মানুষ আহত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর দেশের ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় অস্থিরতা ছিল।
বিবিসি শিরোনামে লিখেছে, সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশ দেন। তিনি গত আগস্টে গণবিক্ষোভের কারণে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
বিবিসি আরও বলছে, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন, যা বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হয়েছিল। ওই বিক্ষোভে কয়েকশ লোক নিহত হন।
আল জাজিরা লিখেছে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রেপ্তার চান বাংলাদেশের আদালত। বাংলাদেশের একটি আদালত স্ব-নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন, যিনি দুই মাসেরও বেশি আগে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহে পতনের পর ভারতে পালিয়ে যান।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনাল হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের সাবেক নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি আদালত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ৭৭ বছর বয়সী এ নেত্রী ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন শিরোনামে লিখেছে, বাংলাদেশের আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে গণগ্রেপ্তার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেখা যায়।
চ্যানেল নিউজ এশিয়া তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের একটি আদালত নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন। গত আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম দিনটিকে একটি উল্লেখযোগ্য দিন হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বার্তাসংস্থা এএফপির বরাতে বলছে, বাংলাদেশের একটি আদালত বৃহস্পতিবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গত আগস্টে ছাত্রদের বিক্ষোভে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ক্ষমতা হারিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির কাছে একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে তার আনুষ্ঠানিক অবস্থান ছিল।
আরেক ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু বলছে, সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ৪৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়ে ট্রাইব্যুনালে দুটি পিটিশন দাখিল করেন। এরপর চেয়ারম্যান গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল পরোয়ানা জারি করে আদেশ দেন।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ঘোষণা দেওয়া হয়।