‘ক্ষতির আশঙ্কায়’ এনসিপির অর্থের উৎস প্রকাশ করলেন না নাহিদ ইসলাম
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর অর্থের উৎস নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
দলকে নেতৃত্ব দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে আসা নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপির অর্থের উৎস প্রকাশ করার ইচ্ছে থাকলেও দাতাদের ‘ক্ষতির আশঙ্কায়’ তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।
শুক্রবার, বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে অস্থায়ী কার্যালয়ে এনসিপির প্রথম সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে এনসিপির আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করা হয়। সে সমাবেশে সারাদেশ থেকে কর্মী সমর্থকরা আসেন।
এনসিপির নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের খরচের টাকা কোথা থেকে এসেছে, এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক পরিসরে উঠেছে। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বিষয়টি সামনে আনলে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূত্র ধরে এই সংস্কৃতিটা আসুক, যে আর্থিক সহায়তা কোথা থেকে আসছে এবং কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে তা যেন তুলে ধরা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “এই সংস্কৃতিটা সব রাজনৈতিক দলে আসা উচিত। এককভাবে এই সংস্কৃতি আমাদের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়।”
“আমরা যদি তাদের (দাতা) নাম প্রকাশ করি, তারা যে কোনোভাবে ক্ষতির শিকার হবে না, সেই নিশ্চয়তা তো সরকার থেকে দিতে হবে। আমরা চাই, এই সংস্কৃতিটা চালু হোক। সবাই সেই সংস্কৃতি গ্রহণ করুক,” যোগ করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে, সেদিন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। পরবর্তী কয়েকদিনের নানা ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচন নিয়ে নাহিদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে ‘এই বছর নির্বাচন করা সম্ভব নয়’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, সেটাও ভুলভাবে এসেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি কথাটা ঠিক এইভাবে বলি নাই। বলেছিলাম, এখন দেশে আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি, পুলিশ যেরকম নাজুক অবস্থায় আছে, সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করাটা অনেক বেশি কঠিন হবে। আমাদের অবশ্যই নির্বাচনের আগে পুলিশিং ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।”
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, ইভটিজিং হচ্ছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, জনপরিসরে এই ধরনের নিপীড়নের দ্রুত বিচার যেন হয়।”
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্মীরা এই কাজে বেশি যুক্ত হচ্ছে যাতে নারীরা রাজনীতিতে ও দেশ গঠনের কাজে যুক্ত হতে না পারে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তার বক্তব্যের সূত্রে প্রকাশ হওয়া কিছু সংবাদের সংশোধনী দিয়ে নাহিদ বলেন, “নির্বাচনের জন্য নাগরিক পার্টির মানসিকতা ও প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা জাতীয় সংসদের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন দেখতে চাই।”
নির্বাচনী জোট সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বিস্তারে মনোযোগী। জোট নিয়ে ভাবার সময় এখনও আসেনি।”
বৃহস্পতিবার এনসিপি থেকে তিন নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন- যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবু হানিফ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তর অঞ্চল) হানিফ খান সজিব ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুজ জাহের।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “তাদের বলেছিলাম, আপনি যখন আগের পার্টিতে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, তখনই কাজ শুরু করতে পারবেন। কিন্তু তারা নিজেদের পলিটিক্যাল পার্টিতে ফিরে গেছেন।”