নাগরিক অধিকার

“ক্যান্টনমেন্ট থেকে” আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে: হাসনাত

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে।

তিনি এই পরিকল্পনাকে “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ” নামে একটি নতুন ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠতে থাকে। আন্দোলনকারী ছাত্রনেতারা এবং কয়েকটি রাজনৈতিক দল এ নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে। এমনকি অক্টোবর মাসে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধও করা হয়।

সম্প্রতি, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ নিয়ে নতুন করে সরব হয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। গত কয়েকদিন ধরে তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একের পর এক স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, যেখানে তিনি আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

গত ৯ মার্চ তিনি লেখেন, “২০২৫-এ এসে ২০১৩ ফেরানোর চেষ্টা করবেন না। সাবধান!”
১২ মার্চ তিনি লেখেন, “এই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা চলছে। ‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ‘ট্যাবলেট’ হাজির হবে।”
১৫ মার্চ তার স্ট্যাটাসে ছিল, “যে পথ দিয়ে আওয়ামী লীগ পালিয়েছে, সেই পথ দিয়েই ফেরানোর ষড়যন্ত্র চলছে।”

অবশেষে ২০ মার্চ মধ্যরাতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে লেখেন, “ড. ইউনূস, আওয়ামী লীগ ৫ই আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তর পাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।”

এখানে “উত্তর পাড়া” বলতে সাধারণত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোঝানো হয়ে থাকে।

হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় ক্যান্টনমেন্টে তাদের সামনে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তাদের বলা হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে তারা যেন এই পরিকল্পনা মেনে নেয়।

তিনি লেখেন, “আমাদের বলা হয়, একাধিক রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে এই প্রস্তাব পেয়েছে এবং শর্তসাপেক্ষে রাজি হয়েছে। কারণ, একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের চেয়ে দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকাই ভালো।”

তিনি আরও দাবি করেন, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে গঠন করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”

আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার জন্য চাপের অভিযোগ
হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, তারা এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, “আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচন হবে না।”

এতে তিনি পাল্টা জবাব দেন, “আ’লীগের সাথে কোনও ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আ’লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে।”

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে চায় না।

হাসনাত আব্দুল্লাহর স্ট্যাটাসের পর বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। রাত দুইটায় শুরু হওয়া এই মিছিল বিভিন্ন হল ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই দলটি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নেই, তবে যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিচার হবে।