আ.লীগের বিষয়ে ‘সিদ্ধান্ত’ দেওয়ার এখতিয়ার সেনাবাহিনীর নেই : এনসিপি
বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া বা বাতিল করার এখতিয়ার সেনাবাহিনী কিংবা অন্য কোনো সংস্থার নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকার, রাজনৈতিক দল এবং জনগণই এই সিদ্ধান্ত নেবে।”
এনসিপির অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে।
তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা ও কৌতূহলের সৃষ্টি করে।
শুক্রবার রাতে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করতে সংবাদ সম্মেলন করেন এনসিপি নেতারা। সেখানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।
নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া অগ্রসর হচ্ছে ধীরগতিতে, যা নিন্দনীয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকার পরও বিচারিক প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলছে।”
এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই”—এই মন্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
নাহিদ ইসলামের মতে, আওয়ামী লীগ বর্তমানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর বাইরে অবস্থান করছে। তিনি দাবি করেন, “বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ক্যান্টনমেন্টে নিজে গিয়েছিলেন নাকি ডেকে নেওয়া হয়েছিল, এবং সেখানে কারা উপস্থিত ছিলেন?
জবাবে তিনি বলেন, “পাঁচ অগাস্টের পর বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তবে, ১১ মার্চের বৈঠকের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “সেখানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। আমার স্ট্যাটাসে সব স্পষ্ট করা হয়েছে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহর দাবি, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় ক্যান্টনমেন্টে তাদের সামনে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় এবং বলা হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে তারা যেন এই প্রস্তাব মেনে নেয়।
“আমাদের জানানো হয়, ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাবে শর্তসাপেক্ষে রাজি হয়েছে। তাদের মতে, একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের চেয়ে দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা ভালো।”
তিনি আরও বলেন, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন দল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই দলের নেতারা এপ্রিল-মে মাসে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।”
এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করার পর তাদের জানানো হয়, “আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ নির্বাচন সম্ভব নয়।”
এনসিপির এই অভিযোগ সম্পর্কে সেনাবাহিনী কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। আইএসপিআর জানায়, তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায় না।
শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিলটি বিভিন্ন হল ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই দলটি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই, তবে যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিচার হবে।”