আমেরিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে ৬টি বিষয় যা হয়তো অনেকের অজানা
ডালাসে দুই উত্তর আমেরিকার দেশের ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আমেরিকা দাপুটে ব্যাটিং দিয়ে কানাডাকে হারিয়ে দিলো ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে।
প্রথম ম্যাচেই আমেরিকার অ্যারন জোন্স টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং দিয়ে মুগ্ধ করেছেন ডালাসের দর্শকদের, ১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
আমেরিকার মাটিতে এই ক্রিকেট প্রদর্শনীর প্রথম দিনে মাঠে ও টেলিভিশনের দর্শকরা আনন্দ প্রকাশ করেছে।
এবারের বিশ্বকাপে কিছু স্বকীয় বিষয় রয়েছে, যা একে অন্য বিশ্বকাপ থেকে আলাদা করেছে।
বেজবল মাঠ হলো ক্রিকেট স্টেডিয়াম
ডালাসের যে মাঠে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচ খেললো এটি ছিল বেজবল মাঠ, এই মাঠ ছিল টেক্সাসের বেজবল দল টেক্সাস এয়ার হগসের হোম ভেন্যু।
এটাকে এখন সুদৃশ্য ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
২০২০ সালে আমেরিকান ক্রিকেট কর্তৃপক্ষ লম্বা সময়ের জন্য এই মাঠ লিজ নিয়ে নেয়।
ইউএসএ ক্রিকেট ২০২১ সালে ঘোষণা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “উচ্চ মানের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভাব” এর কারণে মেজর লীগ ক্রিকেটকে ২০২২ থেকে ২০২৩-এ পিছিয়ে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে এই মাঠটিকে দারুণ এক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ম্যাচও আয়োজিত হচ্ছে।
৬ তারিখ পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এবং ৭ তারিখ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মাঠে খেলবে।
একই ভাবে গড়ে উঠেছে নিউ ইয়র্কের নাসাউ স্টেডিয়াম যেখানে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ ও ভারত।
এইসব মাঠের বিশেষ ফিচার হচ্ছে ড্রপ ইন পিচ। ড্রপ ইন পিচ মানে যা মাঠ থেকে দূরে প্রস্তুত করা হয় পরে মাঠে কেবল বসিয়ে দেয়া হয়।
বিবিসি বাংলার খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল অনুসরণ করুন।
অভিবাসী ক্রিকেটারের মেলা
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা দুই দলেই কিছু অভিবাসী ক্রিকেটার আছেন, যারা ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশ থেকে উত্তর আমেরিকা পাড়ি জমিয়ে ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আলি খান তাদেরই একজন, পাকিস্তানে জন্ম নেয়া এই ফাস্ট বোলার বিশ্বকাপের আগেই বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে বোল্ড আউট করে জানান দিয়েছেন যে এখানে শুধু অংশগ্রহণ করতে আসেননি তারা, জিততে এসেছেন।
আলি খান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা এমন একটা দল যারা যে কাউকে হারাতে সক্ষম।”
আলি খান যখন আমেরিকায় পা রাখেন ক্রিকেট খেলা তার লক্ষ্য ছিল না, এখানে এসেছিলেন জীবিকার সন্ধানে, অন্য সাধারণ প্রবাসীদের মতোই ছিল তার জীবন, মোবাইল মেরামতের দোকানে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।
সেখান থেকে আলি খান মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সাথে শিকাগোতে যেতেন ওহাইও থেকে ক্রিকেট খেলতে, সেখান থেকে একবার নজরে আসেন কোর্টনি ওয়ালশের, সেই শুরু। এখন সেই আলি খান বিশ্বকাপ খেলছেন, সাকিব আল হাসানকে বোল্ড করেছেন, সামনে রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলিকে বল করবেন, নিজের সাবেক দেশ পাকিস্তানের বিপক্ষেও খেলা আছে।
এবারের বিশ্বকাপে এমন অনেকেই আছেন যারা নিজের সাবেক দেশের বিপক্ষে খেলবেন যেমন যুক্তরাষ্ট্র দলেই দুজন আছেন যারা ভারতের হয়ে অনুর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন- হারমিত সিং ও সৌরভ নেত্রাভাল্কার।
কানাডা দলেও আছেন এমন ভারতে জন্ম নিয়েছেন পরে কানাডা এসে ক্রিকেট খেলেছেন।
শ্রেয়াস মোভা, দিলপ্রিত বাজওয়া, নাভনিত ঢালিওয়ালদের জন্ম ভারতে।
পারগত সিং-তো রঞ্জি ট্রফিও খেলেছেন ২০১৫-২০১৬ সালের দিকে, ২০২৩ সালে এসে কানাডার জাতীয় দলে নাম লিখিয়েছেন।
কানাডার জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাদ বিন জাফরের জন্ম পাকিস্তানে, ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো থেকে পড়ালেখা করা সাদ এখন অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে গোটা চার ওভার বল করে কোনও রান না দেয়াড় রেকর্ড সাদের নামে।
এছাড়াও অন্য দেশের সাবেক ক্রিকেটাররাও অনেক দেশের হয়ে যোগ দিয়েছেন। যেমন আমেরিকার হয়ে খেলছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার কোরি অ্যান্ডারসন, নামিবিয়ার হয়ে খেলছেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার ডেভিড ভিজা।
সহযোগী দেশের বিশ্বকাপ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী দেশগুলোর জন্য বিশ্বকাপ বিশেষ কিছু, তাই এবারের এই চার গ্রুপে ১৬ দলের বিশ্বকাপে আছে ৯টি সহযোগী দল।
কানাডা, আমেরিকা, উগান্ডা, নামিবিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, স্কটল্যান্ড, নেপাল, পাপুয়া নিউ গিনি- এই নয়টি দেশের ক্রিকেটারদের জন্যই এটা বড় সুযোগ।
বিশ্বকাপের মঞ্চে এই সহযোগী দেশগুলো প্রায়ই চমক দেখায়, যেমন ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি এবং ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস।
২০২২ এ অস্ট্রেলিয়ায় আয়োজিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল নামিবিয়া।
ওদিকে জিম্বাবুয়ের মতো পূর্ণ সদস্য এবারের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
অস্ট্রেলিয়ার সামনে বিশেষ রেকর্ডের হাতছানি
অস্ট্রেলিয়া বর্তমানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপার মালিক, ২০২৩ সালে জিতেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এখন লক্ষ্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া জিতে গেলে এই দলটি হবে প্রথম ক্রিকেট দল যারা একই সময়ে তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের সেরা দলের খেতাব পাবে।
অস্ট্রেলিয়া এর আগে ২০২১ সালে টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল কিন্তু একই সাথে তিন ফরম্যাটের ট্রফি ছিল না তখন।
অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এটা খুবই সম্ভব।
এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ফেভারিট হিসেবেই আসছে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দারুণ টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা খুঁজছে তার সপ্তম দাবিদার
২০০৭ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আট আসরে দুইবার করে জিতেছে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা জিতেছে একবার করে।
দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড এখনও কোন শিরোপা জেতেনি।
নিউজিল্যান্ড ২০২১ সালে ফাইনাল খেলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও ফাইনালও খেলেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুইবার ফাইনালে গিয়ে দুইবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
ইংল্যান্ড ৩বার ফাইনাল খেলে ২ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
পাকিস্তানও ৩বার ফাইনাল খেলেছে, তবে শিরোপা নিয়েছে শুধু ২০০৯ সালে।
ভারত ফাইনাল খেলেছে ২ বার, ২০০৭ ও ২০১৪ সালে, ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়ন দল ভারত।
সব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা মাত্র দুজন
২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল।
২০০৭ থেকে ২০২৪- সব মিলিয়ে নয়টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র দুজন ক্রিকেটার সবগুলো আসরে খেলেছেন।
রোহিত শর্মা ও সাকিব আল হাসান, গত রাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার গা গরমের ম্যাচের মধ্যে দুই দেশের দুই বড় নাম একসাথে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলেছেন।
রোহিত শর্মা ও সাকিব আল হাসান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের বেশ কটি রেকর্ডেরও মালিক।
রোহিত শর্মা আছেন শীর্ষ রান সংগ্রাহকের তালিকায়, সাকিব এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি উইকেটের মালিক।